অল্প বিনিয়োগে প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসা ৫


অল্প বিনিয়োগে প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসা ৫

আপনি যদি ঢাকা শহরে নিলক্ষেত এলাকায় যান তাহলে নিশ্চয়ই দেখেছেন সেখানে শতশত মানুষ কম্পিউটার-প্রিন্টার নিয়ে ব্যবসা করছে। ইংকজেট প্রিন্টার নিয়মিত ব্যবহার না করলে কালি শুকিয়ে যায়, কালার লেজার প্রিন্টার কিনে ঘরে রেখে দিতে পারেন না। আপনার ব্যক্তিগতভাবে প্রিন্টার রাখা প্রয়োজন নেই। আপনার যে ধরনের প্রিন্টই প্রয়োজন হোক না কেন, তাদের কাছে করে নিতে পারেন। সেইসাথে যদি লেখার কিছু সংশোধন করা কিংবা সরল ডিজাইন প্রয়োজন হয় সেটাও করে নিতে পারেন তাদের কাছে।
আপনি যদি গ্রাফিক ডিজাইনার হন তাহলে আরেক ধরনের প্রতিস্ঠানের সাথে পরিচয় থাকার কথা। চাররঙা অফসেটে প্রিন্ট করার জন্য ইমেজ সেটার ব্যবহার করে ফিল্মে প্রিন্ট সার্ভিস দেন তারা। কিংবা ড্রাম স্ক্যানার ব্যবহার করে উচু মানের স্ক্যানিং সার্ভিস।
এই দুধরনের সেবার মাঝামাঝি সেবা দেয়ার ব্যবসা প্রতিস্ঠান গড়ে তুলতে পারেন অল্প খরচেই। মাঝামাঝি বলার অর্থ একদিকে আপনি যেমন কোটি টাকা বিনিয়োগ করছেন না অন্যদিকে একেবারে ছোট ব্যবসাও করছেন না।
গ্রাফিক ডিজাইন এবং প্রিন্টিং সার্ভিস এমন সেবা যেখানে কাজের সমস্যা হয় না। বিভিন্ন প্রতিস্ঠান তো বটেই, ব্যক্তিগত পর্যায়েও নানারকম প্রিন্ট কিংবা কিছুটা ডিজাইনের কাজ করা প্রয়োজন হয়। অনেকে কম্পিউটার কেনার সময় শখ করে প্রিন্টার কেনেন কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বুঝে যান সেটা না করে প্রয়োজনের সময় কোথাও থেকে প্রিন্ট করে নেয়া অনেক নিরাপদ এবং খরচ কম। অনেক ভাল মানের প্রিন্ট পাওয়া যায় কম খরচে।

কি যন্ত্রপাতি প্রয়োজন
মুলত প্রিন্টিংকে মুল ধরে প্রস্তুতি নিতে পারেন। কারো প্রয়োজন সাধারন টেক্সট প্রিন্ট কারো মোটামুটি রঙিন প্রিন্ট, কারো ফটোকোয়ালিটি প্রিন্ট। এজন্য কদমামী ইংকজেট প্রিন্টার, ফটোকোয়ালিটি প্রিন্টার এবং লেজার প্রিন্টার রাখতে পারেন। এদের সবগুলিই বর্তমানে যথেষ্ট কমদামে পাওয়া যায়।
এছাড়া স্ক্যানার, ডিজিটাল ক্যামেরা ইত্যাদি রাখতে পারেন। সেইসাথে কম্পিউটার এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা প্রয়োজন।
উন্নত দেশগুলিতে এধরনের কাজ করা হয় ইন্টারনেটের মাধ্যমে। আপনি উদ্দ্যোগ নিয়ে সেই সুবিধে চালু করতে পারেন। এতে একদিকে যেমন দিনরাত সেবা দেয়া সম্ভব, অন্যদিকে যাতায়াতের মত কষ্টকর কাজ করতে হয় না। ক্লায়েন্ট নিরাপদ বোধ করবেন যখন জানবেন তার কাজ কখন-কিভাবে হচ্ছে। এজন্য আপনার প্রয়োজন ইন্টারনেট সংযোগ এবং একটি ওয়েবসাইট। খুব সহজেই এগুলির ব্যবস্থা করা যায়। এরফলে প্রচার যেমন বাড়বে, কাজ বাড়বে সেইসাথে আয় বাড়বে।

কি কি বিষয়ে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন
আপনার প্রচার এবং সুনাম যত বেশি কাজের সম্ভাবনা তত বেশি। যদি ইন্টারনেট ভিত্তিক প্রিন্টি চালু করেন তাহলে যেহেতু অন্যরা করছে না, আপনি করছেন, এটাই বড় ধরনের প্রচারের সুযোগ। আপনার মুল দায়িত্ব মানুষের আগ্রহ ধরে রাখা, সেবা দিয়ে সন্তুষ্ট রাখা। কাজটি সম্ভব খুব সহজেই।
আপনার মুল কাজ কম খরচে সেবা দেয়া। প্রতিটি প্রিন্টের জন্য আপনার খরচ কত হচ্ছে সেটা আপনার জানা। কাগজ-কালি-যন্ত্রপাতির অবচয় সবকিছু সহ। তারসাথে ঘন্টায় কতটা প্রিন্ট করা সম্ভব, প্রতি ঘন্টা প্রিন্ট করলে কত লাভ হতে পারে এই বিষয়গুলি হিসেব করে কাজের মুল্য নির্ধারন করুন এবং সেটা স্পষ্টভাবে ক্লায়েন্টকে জানন।
অনেক সময়ই ক্লায়েন্টের প্রয়োজন হয় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। হয়ত কেউ প্রিন্ট করে কোথাও জমা দেবেন বেলা ১২ টার মধ্যে, তাকে ১ ঘন্টা দেরীতে দিলে সেটা তার কোনই কাজে আসবে না। এই বিষয়গুলি মাথায় রেখে কাজ ঠিক করে নিন। কোন কাজ কখন শেষ হবে নিষ্চিত করুন (লোডসেডিং এর মত বিষয়কে মাথায় রেখে)।
কারো প্রয়োজন কম খরচে প্রিন্ট, কারো প্রয়োজন উচুমানের প্রিন্ট। যার যা প্রয়োজন সেদিকে দৃষ্টি দিন। ক্লায়েন্টের বিস্বস্ততা অর্জন করুন। কাজের মান এবং খরচ দুদিকে যতবেশি সুবিধে দেবেন তত বেশি ক্লায়েন্ট পাবেন।

কিভাবে শুরু করবেন
কতটা বড় আকারে ব্যবসা করতে চান তার ওপর নির্ভর করে আপনি কিভাবে শুরু করবেন। একটিমাত্র কম্পিউটার দিয়ে শুরু করতে পারেন। আবার লোকবল এবং প্রচারের ব্যবস্থা থাকলে একবারে বড় করে শুরু করতে পারেন। বড় করে শুরু করার সুবিধে হচ্ছে শুরুতেই বড় ধরনের প্রচার পাওয়া যায়। ফলে একবারেই ব্যবসা দাড়িয়ে যায়।
যদি বড় আকারে করতে চান তাহলে যোগাযোগের সুবিধেসহ বড় যায়গা প্রয়োজন। যদি মুলত বাড়িতে পৌছে দেয়ার লক্ষে কাজ করেন তাহলে আবাসিক বাড়িতেই করা সম্ভব। আর মাঝামাঝি ধরনের জন্য কোন মার্কেটে যায়গা নেয়া যথেষ্ট।
অবস্থান এবং যোগাযোগের বিষয়টি গুরুত্বপুর্ন। শুরুতে নিলক্ষেতের উদাহরন দেয়া হয়েছে। সেখানে বেশি ক্লায়েন্টের একটি কারন পাশেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্য যায়গা থেকেও যাতায়াত তুলনামুলক সহজ। প্রিন্ট হাউজগুলি মুলত মতিঝিল এলাকায় আর প্রকাশনার প্রতিস্ঠানগুলি বাংলাবাজারে।

অতিরিক্ত সম্ভাবনা
ব্যবসার মুলসুত্র যোগাযোগ। আপনি কি লক্ষ্য করেছেন কি অধিকাংশ মানুষ কোন কাজের প্রয়োজন হলেই পরিচিত কাউকে জিজ্ঞেস করতে শুরু করে, অমুক কাজ কোথায় করা যায়।
প্রিন্টের প্রতিস্ঠান হতে পারে যোগাযোগের মাধ্যম। স্থানীয়ভাবে ব্যক্তি বা প্রতিস্ঠানের গ্রাফিক ডিজাইন, ডাটা এন্ট্রি থেকে শুরু করে নানাধরনের কাজ করা প্রয়োজন হয়। যোগাযোগের মাধ্যমে হিসেবে ক্লায়েন্টকে সেগুলি জানান, প্রয়োজনে পার্টটাইম কাউকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিন। বহু ব্যক্তি পাওয়া যাবে যারা বাড়িতে বসে টাইপ করা থেকে শুরু করে ভিডিও এডিটিং কাজ করে দিতে পারেন। আপনার প্রতিস্ঠানকে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে অতিরিক্ত আয় করতে পারেন।
সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা, উদ্দ্যোগ নেয়া এবং শুরু করাই প্রধান কাজ। শুরু করলে ক্লায়েন্টর চাহিদা অনুযায়ী ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর বহু সুযোগ রয়েছে।

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons