অল্প বিনিয়োগে প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসা ২


অল্প বিনিয়োগে প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসা ২

বর্তমান যুগের মানুষ ডিজিটাল জগতে বাস করে। টিভি, ডিভিডি, মোবাইল ফোন সব যায়গায় মানুষ ছবি, ভিডিও দেখতে পছন্দ করে। একে ব্যবসা হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। বলা হচ্ছে ভিডিও রেকর্ড করার কথা। বিয়ে, জন্মদিন, পারিবারিক অনুষ্ঠান, সেমিনার, পার্টি, খেলাধুলা, পিকনিক ইত্যাদির ভিডিও করে তাকে সিডি-ডিভিডি-ব্লুরে ডিস্কে তৈরী করে দেয়া।
সবচেয়ে বড় কাজ বিয়ের অনুষ্ঠান রেকর্ড করা। বিষয়টি সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। এজন্য একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন রয়েছে যারা বিয়ের ভিডিও নিয়ে নানারকম পরার্মশ দেয়, অন্যদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। আর বিয়ের অনুষ্ঠঅন মানুষের জীবনে আনন্দোচ্ছল একটি দিন যার স্মৃতি মানুষ ধরে রাখতে চায়। এর চাহিদা আগে যেমন ছিল, বর্তমানে বাড়ছে আগামীতে আরো বাড়বে।
কি যোগ্যতা প্রয়োজন
একজন মানুষের হাতে ক্যামেরা থাকলেই তিনি ভিডিও করতে পারেন। অনেক স্মার্টফোনে হাই ডেফিনিশন ভিডিও রেকর্ড করা যায়। আপনি যখন একে পেশা হিসেবে নেবেন তখন নিশ্চয়ই এমন কাজ করবেন না যা দেখে আরেকজন বলবে, ওটা আমিই করতে পারি। এজন্য আপনাকে যথেস্ট পারিশ্রমিক দেয়া হবে না।
আপনি যখন পেশাদার তখন আপনার কাজে তার প্রতিফলন থাকতে হবে। উচুমানের কাজ করবেন যেন সেটা দেখেই অন্যরা বোঝেন কেন পেশাদার প্রয়োজন। এজন্য ভিডিওগ্রাফি কোর্স করতে পারেন, বইপত্র-ইন্টারনেট ব্যবহার করে শিখতে পারেন। নিয়মিত কাজ করে দক্ষতা বাড়াতে পারেন। মোটকথা আপনাকে বুঝতে হবে ভিডিওগ্রাফি কি, কোন আলোতে কিভাবে ভাল ভিডিও পাওয়া যায়।
ভিডিও বলতে গ্রাহক বুঝবে তৈরী ভিডিও, যারসাথে এডিটিং এর সম্পর্ক রয়েছে। আপনাকে এডিটিং এর সময়ও দক্ষতা দেখাতে হবে। সেটাও শিখতে হবে ভালভাবে। এই সাইটে অনেকগুলি টিউটোরিয়াল রয়েছে এবিষয়ে।
কি প্রয়োজন
ভিডিও রেকর্ড করার জন্য অবশ্যই আপনার ক্যামেরা প্রয়োজন। ক্যামেরা যতটা ভাল হয় ভিডিওর মান তত ভাল হবে। এজন্য সেমি-প্রোফেশনাল ক্যামেরা পাওয়া যাবে ১ লক্ষ টাকার মধ্যে (বাংলাদেশি টাকায়)। ক্লায়েন্টের একটি সাধারন ধারনা ক্যামেরার বড় হলে ভিডিও ভাল হয়, অন্যদিকে প্রফেশনাল ক্যামেরাগুলিও ক্রমে ছোট হয়ে আসছে। ক্লায়েন্টকে বুঝানোর দায়িত্ব আপনার। একই দিনে একাধিক যায়গায় কাজ করার জন্য একাধিক ক্যামেরা প্রয়োজন হতে পারে। বর্তমানের ক্যামেরাগুলি রেকর্ড হয় মেমোরী কার্ডে বা এধরনের অন্য মাধ্যমে, ফলে ক্যাসেটের খরচ নেই।
ক্যামেরার জন্য ট্রাইপড এবং লাইটের বিষয়টিও মাথায় রাখুন।
এডিটিং এর জন্য প্রয়োজন হবে একটি শক্তিশালী কম্পিউটার। প্রসেসর শক্তিশালী হলে ভাল, সেইসাথে বেশি মেমোরী, হার্ডডিস্কে বেশি যায়গা, এবং ভাল ভিডিও কার্ড থাকলে সুবিধে পাবেন।
হাইডেফিনিশন ভিডিওর চাহিদা বর্তমানে ক্রমশ বাড়ছে। ব্লুরে ভিডিও রেকর্ড করে অতিরিক্ত অর্থ নিতে পারেন।
কিভাবে কাজ পাবেন
ভিডিও কাজ পাওয়ার জন্য অফিস গুরুত্বপুর্ন। আর এদিকে খরচ এতটাই বেশি যে মুল বিনিয়োগের টাকা এদিকে দিতে হয়। সম্ভব হলে নিজে অফিস নিন, সম্ভব না হলে কারো সাহায্য নিয়ে তার ঠিকানা ব্যবহার করুন। বর্তমান যুগে মানুষ যোগাযোগ করে মোবাইল ফোনে কাজেই এতে খুব সমস্যা হওয়ার কথা না।
এই ব্যবসার জন্য প্রচার প্রয়োজন। আপনার ক্লায়েন্ট যেহেতু স্থানীয় লোকজন সেকথা মাথায় রেখে প্রচারের ব্যবস্থা করুন। এখানে ওখানে পোষ্টার-ব্যানার লাগাতে পারেন। কার্ড ছেপে পরিচিতদের দিন। পরিচিত ব্যক্তিদের সাহায্যে যোগাযোগের চেষ্টা করুন।
নিজের করা কাজগুলির ভাল অংশগুলি একসাথে করে একটি সিডি-ডিভিডি তৈরী করুন অন্যদের দেখানোর জন্য। নিজস্ব ওয়েবসাইট রাখতে পারেন প্রচারের জন্য। অনেকে কেবল টিভিতে বিজ্ঞাপন দেন। এধরনের সম্ভাব্য যায়গাগুলিতে বিজ্ঞাপন দিন।
ভিডিও রেকর্ড করা এবং সেগুলি এডিট করার বাইরে যারা নিজেরা ভিডিও করেন সেগুলি এডিট করার কাজও করতে পারেন। এতে অতিরিক্ত অর্থ এবং পরিচিতি দুদিকেই সুবিধে পাওয়া যায়।
কিভাবে শুরু করবেন
এধরনের উদ্দ্যোগ একা নেয়া কঠিন। একই ব্যক্তি ক্যামেরাম্যান এবং এডিটর হিসেবে কাজ করা কঠিন। বিয়ে বিষয়টি ঋতুভিত্তিক, বাংলাদেশে অধিকাংশ বিয়ে হয় শীতকালে কাজেই একই দিনে একাধিক যায়গায়  কাজ থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক যোগাযোগ রাখতে পারেন ক্যামেরাম্যানের সাথে। প্রয়োজনে অন্যের ক্যামেরা ভাড়া নিয়েও জরুরী কাজ চালাতে পারেন।
অন্তত দুজন মিলে শুরু করুন। একজন ক্যামেরা ব্যবহারে দক্ষ হবেন, আরেকজন এডিটিং এবং ফোনে যোগাযোগের কাজ করবেন।
ভবিষ্যত সম্ভাবনা
যারা ভিডিও নিয়ে কাজ করেন তারা একসময় নিজে কিছু করার পথে যান। অনুষ্ঠান ভিডিও থেকেই একসময় ভিডিও বিজ্ঞাপন তৈরীর কাজে হাত দিতে পারেন। কিংবা নিজেই একটা ডকুমেন্টারী, নাটক কিংবা মুভি তৈরী করতে পারেন।
শেষকথা
একাজ আগে থেকে যারা করছেন তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করেই আপনাকে কাজ করতে হবে। প্রতিযোগিতার মুল বিষয় আপনার কাজের মান। অন্যের চেয়ে কম টাকায় কাজ করার প্রতিযোগিতায় কখনো যাবেন না। লক্ষ করলে দেখবেন যারা কাজ করছে তাদের একজন অপরজন থেকে ১০ গুন বেশি অর্থ নেন, তারপরও তারকাছেই ক্লায়েন্ট বেশি।
কাজের মান ঠিক রাখুন, দৈর্য্য ধরে পরিচিতি বাড়াতে চেষ্টা করুন। একসময় স্থায়ী ব্যবসা হিসেবে খ্যাতি এবং অর্থ দুইই পাবেন।

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons