অল্প বিনিয়োগে প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসা ৪


অল্প বিনিয়োগে প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসা ৪

বিনিয়োগ যখন অল্প তখন মেধা এবং পরিশ্রম বেশি এটাই স্বাভাবিক। একেবারে কম যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কম্পিউটার সার্ভিসিং এজন্য আদর্শ ব্যবসা হতে পারে। বর্তমানে কম্পিউটার সকলের কাছেই একটি প্রয়োজনীয় বিষয়। আপনার চারিদিকে হাজার হাজার কিংবা লক্ষ লক্ষ মানুষ কম্পিউটার ব্যবহার করছেন। তারা প্রতিনিয়ত নানারকম সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছেন। তাদের সমস্যা সমাধান করাকে পেশা হিসেবে নিতে পারেন।
কি প্রয়োজন
মুল প্রয়োজন আপনার দক্ষতা। ব্যবহারকারীর সমস্যাগুলিকে দুভাবে ভাগ করতে পারেন, হার্ডঅয়্যার ভিত্তিক এবং সফটঅয়্যার ভিত্তিক। হার্ডঅয়্যার সমস্যা হচ্ছে কিছু নষ্ট হওয়া, নতুন কিছু লাগানো, কম্পিউটার ঠিকভাবে কাজ না করা। আর সফটঅয়্যার সমস্যা হতে পারে ভাইরাস আক্রমন থেকে শুরু করে সফটঅয়্যার ইনষ্টল করা পর্যন্ত। আপনি যখন সমস্যার সমাধানের দায়িত্ব নেবেন তখন আপনার পর্যাপ্ত দক্ষতা (এবং অভিজ্ঞতা) প্রয়োজন। একজন দক্ষ ব্যক্তি নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রশ্ন করেই ধারনা করে নিতে পারেন আসলে সমস্যাটি কোথায়।
আপনি অল্প সময়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন না। যদি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে তাহলে এই সময় কমাতে পারেন। প্রতিটি সমস্যার পেছনে সত্যিকারের কারন কি সেটা জানার চেষ্টা করে এই দক্ষতা অর্জণ করতে পারেন। কারন ছাড়া কম্পিউটারের সমস্যা হয় না, এই সহজ কথাটি মনে রেখে কারন খোজার চেষ্টা করুন।
জ্ঞানের বাইরে আপনার যন্ত্রপাতি প্রয়োজন খুবই সামান্য। কয়েকটি স্ক্রড্রাইভার ব্যবহার করেই আপনি সব সমস্যার সমাধান করতে পারেন। কম্পিউটারের হার্ডঅয়্যার সমস্যা সমাধানের মুল পদ্ধতি হচ্ছে একটি খুলে আরেকটি লাগিয়ে দেখা। একারনে পরীক্ষা করার মত হার্ডডিস্ক, মেমোরী, গ্রাফিক্স কার্ড, পাওয়ার সাপ্লাই ইত্যাদি রাখতে হবে। এছাড়া এধরনের কাজে ব্যবহার হয় এমন সফটঅয়্যার। সেইসাথে বিভিন্ন ডিভাইসের ড্রাইভার, ম্যানুয়েল ইত্যাদি।
কাজের সম্ভাবনা
প্রতিনিয়ম মানুষের কম্পিউটারে সমস্যা হচ্ছে। কাজেই কাজ পেতে সমস্যা হওয়ার কারন নেই। যা প্রয়োজন তা হচ্ছে ব্যবহারকারীর আস্থা অর্জন করা। যিনি আপনার ওপর নির্ভর করবেন। একদিকে আপনি কাজটি ভালভাবে করতে পারবেন অন্যদিকে আপনি তাকে ঠকাবেন না এই দুই বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয়া প্রয়োজন। আপনি কি লক্ষ করেছেন  ঢাকা শহরে কয়েক হাজার কম্পিউটার প্রতিস্ঠান থাকলেও ব্যবহারকারী কারো নাম উল্লেখ করে বিস্বস্ত বলেন না।
আপনি হতে পারেন সেই বিস্বস্ত ব্যক্তি।
কি নিয়ম মেনে চলবেন
এই কাজে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন স্বচ্ছতা। ক্লায়েন্টকে আগেই জানিয়ে নেবেন তার কাজের জন্য কোন হিসেবে অর্থ নেবেন। আপনি সমস্যা খুজে বের করার জন্য নির্দিষ্ট সার্ভিস চার্জ নেবেন (যতটা সম্ভব কম, সেটা আগেই জানিয়ে দিন)। যদি কোন যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করা প্রয়োজন না হয় তাহলে এরবেশি অর্থ নেবেন না। যদি প্রয়োজন হয় ক্লায়েন্ট কিনে দেবেন অথবা কেনার মুল্য দেবেন।  সেখানে লাভ করবেন না। আপনার মুল আয় সার্ভিস চার্জ থেকে, তাতেই সন্তুষ্ট থাকবেন।
সফটঅয়্যার সমস্যার ক্ষেত্রে আগেই জানিয়ে নেবেন সার্ভিস চার্জ কত। অপারেটিং সিষ্টেম ইনষ্টল করার চার্জ একরকম, ডাটা রিকভারী চার্জ আরেক রকম। কাজ যত জটিল চার্জ তত বেশি এই নিয়মে।
আরো একবার মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে, ক্লায়েন্ট ঠকাতে চেষ্টা করবেন না। তার আস্থা অর্জন করুন। ব্যবসার মুল চাবিকাঠি সেখানেই।
কি করবেন না
পৃথকভাবে একথা উল্লেখ করা প্রয়োজন হয়ত নেই। কিন্তু আপনি যদি বিভিন্ন সার্ভিস সেন্টারের দিকে একবার দৃষ্টি দেন তাহলে একটি সাধারন বিষয় লক্ষ করবেন। তাদের ঘরে জিনিষপত্র রাখার যায়গা নেই। কেউ ঠিক করার জন্য দিয়েছেন, সেটা জমা আছে। মাসের পর মাস, কিংবা বছর। এটা সার্বিসিং কাজের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক।
কারো কাজ হাতে নিলে যতটা সম্ভব দ্রুত কাজ করে দিন। সম্ভব না হলে ফেরত দিন। কখনো নিজের কাছে জমা রাখবেন না। কাউকে সময়মত কাজ করে দিতে না পারলে তারকাছে ক্ষমা চাইবেন। কারন অপরাধ আপনার। তিনি পরবর্তীতে আপনার কাছে আসবেন। যদি তিনি মনে করেন আপনি তাকে ঘুরাচ্ছেন তিনি নিজে আসবেন না, অন্যকে আসতে নিষেধ করবেন।
কি মুলধন প্রয়োজন
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে এজন্য খুব বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন নেই। নির্দিষ্ট একটি যায়গা প্রয়োজন। ঢাকার মত শহরে যায়গা অত্যন্ত দামী। সেখানে বিনিয়োগের পরিমান জানানো সম্ভব না।
নিজের বাড়িতে একটি ঘরকে একাজে ব্যবহার করতে পারেন। প্রয়োজনে বাড়ি বা অফিসে গিয়ে সমস্যা সমাধান করে দিতে পারেন। যদি যোগাযোগ ভাল থাকে তাহলে যায়গা তত গুরুত্বপুর্ন বিষয় হয়ে দাড়াবে না।
অতিরিক্ত সম্ভাবনা
অনেক অফিসে অনেক বেশি সংখ্যক কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। এজন্য তাদেরকে বেতনভোগি লোক নিয়োগ দিতে হয়। যাদের সে সামর্থ্য নেই তাদের সাথে সার্ভিসিং চুক্তি করতে পারেন। কম্পিউটার এবং অন্যান্য ডিভাইসের সংখ্যা হিসেবে করে বার্ষিক চুক্তির মাধ্যমে সেগুলির সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব নিতে পারেন। এরফলে নিয়মিত অর্থ পাবেন। আপনার দায়িত্ব নির্দিস্ট সময়ে গিয়ে সেগুলি দেখে আসা (সপ্তাহে একদিন বা দুদিন এবং তারা সমস্যার খবর দিলে), যতটা সম্ভব সমস্যামুক্ত রাখা। সমস্যা হলে সাথেসাথে ঠিক করে দেয়া। সার্ভিসিং কাজের মত চুক্তি হতে পারে যন্ত্রাংশ ছাড়া অথবা যন্ত্রাংশ সহ।
একেবারে অল্প বিনিয়োগে শুধুমাত্র দক্ষতা এবং বিস্বস্ততার কারনে বিপুল সম্ভাবনাময় প্রতিস্ঠান গড়ে তুলতে পারেন এভাবে।

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons